১. উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই এসব স্থানে আশ্রয় নেওয়া যাবে না। উঁচু গাছ থেকে কমপক্ষে চার মিটার দূরে অবস্থান করতে হবে। তবে নিকটবর্তী পাকা দালানের নিচে আশ্রয় নেওয়াই শ্রেয়।
২. ধানক্ষেত বা খোলা মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসে চোখ বন্ধ রাখতে হবে। তবে কোনো অবস্থায়ই মাটিতে শুয়ে পড়া যাবে না। কারণ মাটিতে শুয়ে পড়লে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৩. খোলা মাঠ, বাড়ির ছাদ বা উঁচু কোনো স্থান থেকে দূরে থাকতে হবে। গবাদি পশুকে খোলা মাঠে রাখা যাবে না।
৪. বজ্রপাতের সময় ঘরের বারান্দা ও জানালার কাছাকাছি থাকা যাবে না। জানালা বন্ধ রেখে ঘরের ভেতরে অবস্থান করতে হবে। এ সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে; এমনকি ল্যান্ডফোনও স্পর্শ করা যাবে না।
৫. বজ্রপাতের সময় বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রের ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত সব যন্ত্রপাতি, বিশেষ করে টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ করা থাকলেও স্পর্শ করা যাবে না। বজ্রপাতের আভাস পেলে প্লাগ খুলে বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। অব্যবহৃত যন্ত্রপাতির প্লাগ আগেই খুলে রাখতে হবে।
৬. বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতরে থাকলে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে দ্রুত পার্ক করা উচিত এবং গাড়ির ভেতরের ধাতব বস্তু স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৬. বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতরে থাকলে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে দ্রুত পার্ক করা উচিত এবং গাড়ির ভেতরের ধাতব বস্তু স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৭. বজ্রপাতের সময় নদী বা জলাশয় থেকে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হবে এবং জলাশয় বা জলাবদ্ধ স্থান থেকে দূরে সরে যেতে হবে। কারণ পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী। নৌকায় অবস্থান করলে দ্রুত ছইয়ের নিচে অবস্থান নিতে হবে। নৌকায় ছই না থাকলে নিচু হয়ে পাটাতনে অবস্থান নিতে হবে।
৮. বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। এ সময় বিদ্যুৎ অপরিবাহী রাবারের জুতা সবচেয়ে নিরাপদ।
৯. লোকালয় থেকে দূরে উন্মুক্ত কোনো স্থানে বাড়ি বানানো যাবে না। বাড়ি থেকে নিরাপদ দূরত্বে তাল, নারিকেল, সুপারিগাছ লাগানো উচিত।
১০. বাড়িকে নিরাপদ রাখতে বজ্রনিরোধক যন্ত্র লাগাতে হবে এবং সেই সঙ্গে আর্থিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
১১. বজ্রপাতে আহত কাউকে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতোই চিকিৎসা করাতে হবে। দ্রুত চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে নিতে হবে। সেই সঙ্গে আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃত্স্পন্দন ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণেই মূলত এমন অস্বাভাবিক বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বজ্রপাতের বেশির ভাগ শিকারই প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক, শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। বাংলাদেশের আকাশে সাধারণত মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত বজ্রমেঘ দেখা যায়। তাই বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য বনায়ন সৃষ্টির পাশাপাশি প্রান্তিক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি সবচেয়ে জরুরি।
লেখক : গবেষক ও পরিবেশবিজ্ঞানী, জাইকা হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট টেলিভিশন৷
No comments:
Post a Comment